তামাক বাণিজ্যে নতুন বিনিয়োগ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে

তামাক বাণিজ্যে নতুন বিনিয়োগ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে

বাংলাদেশের মোট জনগোষ্টির উল্লেখযোগ্য সংখ্যা হচ্ছে যুব সমাজ। আগামিতে দেশ পরিচালনা ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের কান্ডারী হিসেবে এ যুব সমাজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দেশের সমৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়নে এ যুবসমাজকে সুস্থ, দক্ষ, কর্মঠ ও দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব। তাই এ যুবসমাজের উন্নয়ন নিশ্চিত করণ ও কোন প্রকার বিপথগামী না হয় সে দিকে আমদের সচেতন থাকতে হবে।

তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার স্বাস্থ্য, জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এছাড়া মাদকাসক্তির প্রথম ধাপ হিসেবে ধূমপানকে বিবেচনা করা হয়। তাই কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশে তামােেকর ব্যবহার ক্রমহ্রাসমান।বিগত ৮ বছরে দেশে তামাকের ব্যবহার ১৮.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০০৯ সালে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্টীর মধ্যে তামাকের ব্যবহার ছিল ৪৩.৩ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ৩৫.৩ শতাংশে নেমে এসেছে।সার্বিক,এই ফরলফল প্রশংসনীয় তবে ২০৪০ সালে মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে জন্য যথেষ্ট নয়। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে তামাকের ব্যবহার ক্রমশ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২৮.৬ শতাংশে দাড়িয়েছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধূমপায়ীদের হার ১৫.৫ শাতংশে নেমে এসেছে, ফ্রান্সে এক বছরে ধূমপান ছেড়েছে ১০ লাখ ধূমপায়ী।অথাৎ উন্নত বিশ্বতো বটেই পাশ্ববর্তী দেশের অগ্রগতি বিবেচনায় নিলেও বলা যায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোসজনক নয়। উল্লেখ্য, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায় এবং অকাল মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে তামাকের অবস্থান বাংলাদেশে ৪র্থ।তামাক ব্যবহারে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১৫৮.৬ বিলিয়ন টাকা।তামাকের কারণে চরম ঝুঁকিতে শিশু স্বাস্থ্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শাতাংশ শিশুর দেহে উচ্চ মাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান।অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিড়ি কারখানাগুলোর মোট শ্রমিকের ৫০-৭০% শিশু শ্রমিক।বাংলাদেশে ২০০৩ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেম ওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ হয় এবং ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে আরো যুগপোযোগি করা হয়।২০১৫ সলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা পাশ করা হয়।

টেকশই উন্নয়ন অভীষ্ঠ এসডিজিরি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য মাত্রা পুরনে এফসিটিসিকে সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্ত করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূলধারার উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সর্ম্পৃত্ব করা হয়েছে।এছাড়া টেকসই লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের অগ্রগতি নিরুপনে প্রণীত সরকারের এসডিজি পরিবিক্ষণ ও মূল্যায়ণ ফ্রেম ওয়ার্কে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বছর ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারী ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় স্পীকারস র্শীষক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের অংঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি তামাক পণ্যের উপর আরোপিত স্বাস্থ্য উন্নয়ণ সারচার্জ এর অর্থ ব্যবহার করে একটি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

কিন্তু অত্যান্ত চিন্তার বিষয় হচ্ছে সম্প্রতি অপরাজেয় বাংলা প্রত্রিকায় প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর,বুধবার, ২০২০ তারিখ মারফতে জানা যায় এশিয়ান টোব্যকো লিমিেিটড এর সাথে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ(বেপজা) নামক সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এবং উক্ত চুক্তি অনুসারে তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য এশিয়ান টোব্যকো লিমিেিটড কে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ(বেপজা) কর্তৃক জায়গা লিজ প্রদান করা হবে।

এর ফলে একদিকে যেমন তামাক বাণিজ্যে নতুন বিনিয়োগ এসডিজি লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। ঠিক অপর দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের অংঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাধাসহ জণসাধারনের স্বাস্থ্য ক্ষতির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে আরো বহুগুণ।তাই তামাক কোম্পানীর সাথে যে কোন ধরনের সর্ম্পৃত্বতা গ্রহনের বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলকে সচেতন থাকার আহবান জানাচ্ছে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর।