
তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও কিছু ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অন গ্লোবাল টোব্যাকো এপিডেমিক ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। এজন্য বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রয়োজন- তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধন বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় ২১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের প্রধান কার্যালয়ে এ কথা বলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক ও প্রকল্প সমন্বয়কারী (তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প) মোঃ মোখলেছুর রহমান।
মোঃ মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ২০৪০ গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া, বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজ এডিটর রুহুল আমিন রুশদ ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের কমিউনিকেশনস অফিসার সরকার শামস বিন শরীফ।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন রহমান মতবিনিময় সভায় জনস্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে একটি প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে বলেন, বিশ^জুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ কেবল তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে। অথচ এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ততটা নই যতটা হওয়া উচিত ছিল। গণমাধ্যমকর্মীরাই পারেন মানুষের মাঝে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে। তিনি এজন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরকে ভূমিকা রাখতে আহবান করেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের সহকারী পরিচালক মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। তবে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি এফসিটিসির সাথে অনেকাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের জন্য নতুন হুমকি ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আইনে কিছু বলা নেই।
বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজ এডিটর রুহুল আমিন রুশদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে আমরা যদি চলি ডালে ডালে তবে তামাক কোম্পানীগুলো চলে পাতায় পাতায়। একারণে আমরা দেখি তারা নানাবিধ প্রচার প্রচারণা করে মানুষের মধ্যে ধূমপানে উৎসাহিত করার কাজ করে। এ বিষয়ে আইন সংশোধন করে এর কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ২০১৩ সালে তামাক বিরোধী আইন করার সময় গণমাধ্যমগুলো যেভাবে দারুণ ভূমিকা রেখেছিল, এবারও আইন সংশোধন করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের জোড়ালো ভূমিকা থাকবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান আইনের যেসব দূর্বলদিক তামাক নিয়ন্ত্রণে বাধা রয়েছে সেগুলো হলো- বিদ্যমান আইনে গণপরিবহন ও রেস্তোঁরাসমূহে ক্ষেত্রবিশেষে ধূমপানের সুযোগ রাখা হয়েছে, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়নি, বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ নয়, ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহআমদানি ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের আকার/আয়তন নির্ধারণ না করায়সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ও তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়নি। এয়াড়া পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট কেনার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে কোন বাধ্যবাধ্যকতা নেই। এই বিষয়টিতে আইনী বাধ্যবাধকতা দরকার।