তামাকমুক্ত হসপিটালিটি সেক্টর

তামাকমুক্ত হসপিটালিটি সেক্টর

তামাকমুক্ত হসপিটালিটি সেক্টর বাস্তবায়ন কৌশলপত্র চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ এর সহযোগিতায় আজ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয় এবং উক্ত কর্মশালার মধ্যে দিয়েই চূড়ান্ত করা হয় কৌশলপত্রটি। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন) মোঃ ইমরান। সভার সভাপতি বলেন, এসডিজি গোল ৩ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক মনিটরিং টিম গঠনের মধ্য দিয়ে কৌশলপত্রটি কার্যকর বাস্তবায়নের উদ্দ্যেগ গ্রহণ করা হবে এবং সেই সাথে কৌশলপত্রের প্রেক্ষিতে সকল সংস্থা কর্তৃক একটি কর্ম পরিকল্পনা গঠন করার জন্য চূড়ান্ত কৌশলপত্রটি অত্র মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত সকল সংস্থার কাছে বিতরণ করা হবে।

সারা বিশ্বে সমন্বিতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে Framework convention on Tobacco control(FCTC) চুক্তি অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ এই চুক্তির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ এবং এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করে ও পরে ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধিত করা হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত Global adult tobacco survey(GATS) 2017 অনুসারে বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে ৪৩% মানুষ। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে বিদ্যমান আইনে সকল পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সকল পাবলিক প্লেসের মধ্যে হসপিটালিটি সেক্টরের আওয়াতাধীন সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ অন্যতম।

বিশ্বের বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, অন্যান্য পাবলিক প্লেসের তুলনায় হসপিটালিটি সেক্টরে (যেমন- হোটেল, মোটেল, গেষ্টহাউজ, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, বার ইত্যাদি) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের হার বেশি। বাংলাদেশে পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের মধ্যে প্রায় ৫০% মানুষ হসপিটালিটি সেক্টরের আওয়াতাধীন সেবা প্রতিষ্ঠানে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। এমতাবস্থায় , তামাক ব্যবহার না করেও যারা স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তাদের সুরক্ষার নিমিত্তে হসপিটালিটি সেক্টরে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে একটি কৌশলপত্র প্রয়োজন। কারণ, বর্তমানে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন কৌশল ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বারে পরোক্ষ ধূমপানের হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় এর জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহযোগিতায় একটি খসড়া তামাকমুক্ত হসপিটালিটি সেক্টর বাস্তবায়ন কৌশলপত্র তৈরি করেছে। সেই কৌশলপত্র ” টি চূড়ান্তকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় আজ। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপ-সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবগণ, প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার বিভাগ, উপ-সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রোগ্রাম অফিসার, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, নির্বাহী কর্মকর্তা, সাভার পৌরসভা, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ , বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটিড, হোটেলস্ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটিডের প্রতিনিধিবৃন্দ, টুরি‌্যজম রিসোর্ট ইন্ডাসট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সভাপতি, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ ও বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ।

কর্মশালায় তামাকমুক্ত হসপিটালিটি সেক্টর বাস্তবায়ন কৌশলপত্র খসড়া উপস্থাপন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এর যুগ্ম সচিব, ইসরাত চৌধুরী। কর্মশালার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহকারী পরিচালক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো: মোখলেছুর রহমান। কর্মশালায় আরো বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারন সম্পাদক ড. এস এম খলিলুর রহমান।

সবশেষে এই কৌশলপত্রের কার্যকর বাস্তবায়ন ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সভাপতি কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষনা করেন। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ফোকাল পার্সন নিলুফার জেসমিন।