তামাকজাত পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে মানববন্ধন

তামাকজাত পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে মানববন্ধন

২০১৯-২০ বাজেটে সকল প্রকার তামাকজাত পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার দাবিতে আজ ১৭ জুন ২০১৯ সকাল ১০.৩০ মিনিটে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন সাবেক এন বি আর চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ এর আব্দুস সালাম মিঞাঁ, দ্যা ইউনিয়নের টেকনিক্যাল এডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এসিডি, ইপসা, তাবিনাজ, সুপ্র, বিটা, প্রজ্ঞা, ব্যুরো অব ইকনোমিক রিসার্চ, ডবিøউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, প্রত্যাশা, টিসিআরসি, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, বিসিসিপি, এইড ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় এক যোগে একই সময় মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১৩ জুন ২০১৯ তারিখ মাননীয় অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে নিন্ম, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র মূল্য পরিবর্তনের মাধ্যমে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ২, ১৫, ১৮ এবং ১৮ টাকা বৃদ্ধি করে বর্তমান মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭, ৬৩ টাকা, ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা। ফলে, বিশেষত বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এবারের বাজেটে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি না হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বাড়ার কোন সুযোগ থাকছে না। সরকারের এই পদক্ষেপে বিগত বছরের তুলনায় মূল্যস্তর ভেদে তামাক কোম্পানিগুলোর আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। স্তর সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তার সিগারেট স্তর পরিবর্তনের সুযোগ থেকে যাবে। অন্যদিকে, নি¤œস্তরে দাম বৃদ্ধি মাত্র ২ টাকা করা হয় যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এদিকে সিগারেট ধূমপায়ীর প্রায় চার ভাগের তিনভাগই এই নি¤œ স্তরের সিগারেটের ভোক্তা। জনগণের মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় না নেওয়ার ফলে নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতার কোনো পরিবর্তন হবে না এবং একই সাথে নতুন তরুন প্রজন্মকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা যাবে না।এছাড়াও, বিড়ির ক্ষেত্রে বাজেটে ফিল্টারযুক্ত বিড়ির দাম ১৫ টাকা থেকে ১৭ টাকা করা হয়েছে। এদিকে ফিল্টারবিহীন বিড়িতে দাম বেড়েছে মাত্র ১.৫ টাকা। ফিল্টারাবিহীন বিড়ির প্রধান ভোক্তা নি¤œ আয়ের মানুষ। দরিদ্র মানুষের ওপর এই সামান্য মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বেনা। ফিল্টারবিহীন ও ফিল্টারযুক্ত বিড়িতে সম্পূরকশুল্ক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয় যার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং বিড়ি কোম্পানির মুনাফা কিছুটা হলেও কমে আসবে। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবনায় বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন তুলে দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচিত হয়নি। অথচ তামাকের ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্য বাড়ানো। উচ্চ মূল্য তরুণদের তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে এবং বর্তমান ব্যবহারকারীদের তামাক ছাড়তে উৎসাহিত করে। সুতরাং শিশু, কিশোর, যুব সর্বপরি সকল স্তরের জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৯-২০ চূড়ান্ত বাজেটে সকল তামাকবিরোধী সংগঠন সমূহের দাবি, সকল তামাকজাত পণ্যের (বিশেষকরে বিড়ি, নি¤œ ও মধ্যম স্তরের সিগারেট) উপর উচ্চহারে কর আরোপের মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে তা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে। পাশপাশি সিগারেটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪টি মূল্যস্তর বিলুপ্ত করে ২টি মূল্যস্তর (নি¤œ ও উচ্চ) নির্ধারণ করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কোম্পানিকে ইনপুট ক্রেডিট সুবিধা দেয়ায় কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ৩০০০ কোটি টাকা কর রেয়াত করার সুযোগ পাবে। এই সুবিধা রহিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে তামাক করনীতি প্রণয়নের দাবি জানায় তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের প্রত্যাশা, এই দাবিগুলো পূরণ হলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সহজ হবে।
উল্লেখ্য গ্যাটস ২০১৭ অনুযায়ী বলা যায়, বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব) তামাক ব্যবহার করে এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২ কোটি ২০ লক্ষ, ধূমপায়ী ১ কোটি ৯২ লক্ষ। তামাক অসুস্থতা ও অকালমৃত্যু ঝুঁকির অন্যতম প্রধান কারণ। টোব্যাকো এটলাস-২০১৮ এর তথ্য মতে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। মানববন্ধনটি সার্বিক সহযোগীতায় ছিল ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস।