বিশ্বনেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজির) ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে ১৬৯টি টার্গেট পূরণের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে, যার মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা প্রদান অন্যতম। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকা-কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন অডিটরিয়ামে ‘এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে মাদক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন। সেমিনারটি আয়োজন করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। বক্তারা বলেন, বিদ্যমান আইনের দুর্বল বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে অনেক পিছিয়ে রাখবে। কারণ কার্যকর মাদক নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন ব্যতিরেকে এসডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবনমান নিশ্চিতকরণ এবং সব বয়সের সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ সম্ভব নয়। আর এসডিজির অন্যান্য লক্ষমাত্রা (১৭টি) অর্জনে মাদক একটা বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাদক একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা বলেন, এসডিজির তৃতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদ্যমান আইনের পর্যালোচনা ও দীর্ঘমেয়াদি মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মানসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, মাদক চোরাচালানে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হলো বাংলাদেশ। শতকরা ৬০ ভাগ মাদকাসক্ত ব্যক্তি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও বলেন, শতকরা ৭০ ভাগ পরিবার জানে না মাদকাসক্তি একটি ব্রেইন ডিজিজ অর্থাৎ ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগের মতোই এটি একটি রোগ। সুতরাং মাদকাসক্ত ব্যক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, মাদক অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। একটি সময় মাদককে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হতো। কিন্তু আশির দশক থেকে মাদকাসক্তি নিরাময়ের জন্য কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ২৭ হাজার প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। সরকার মাদক নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ, চাহিদা এবং ক্ষতি হ্রাস/ঝুঁকি হ্রাস তিনটি ক্ষেত্রেই কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৩৪ বেসরকারি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রকে অধিদপ্তর লাইসেন্স দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউএনওডিসি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর এবিএম কামরুল আহসান এবং সিভিল সার্জন (ঢাকা) ডা. মো. এহ্সানুল করিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের হেলথ সেক্টরের প্রধান ইকবাল মাসুদ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক ড. খলিলুর রহমান। অন্ষ্ঠুানে অতিথিদের ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয় এবং আহ্ছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাদকবিষয়ক দুটি পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। স্বাগত বক্তব্য প্রদান এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পরিচালক কর্মসূচি (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম ফারুক হামিম।